Cart

No products in the cart.

Blog

  • Home
  • Islamic

ইলমের ফজিলত ও আলেমের মর্যাদা

ইলমের ফজিলত ও আলেমের মর্যাদা

ইলমের ফজিলত ও আলেমের মর্যাদা
ইলম মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত ও অনুগ্রহ। এর মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়। তাই বলা যায়—একজন আলেম দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কোনো আলেম চলে গেলে গোটা দেশ ও সমাজ অচল হয়ে পড়ে। যেহেতু আলেম-ওলামা না থাকলে দীন ও দীনি জ্ঞান চর্চা হবে না, পৃথিবীর সব মানুষ মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়ে চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হয়ে যাবে, তাই একজন প্রকৃত আলেমকে দান করা হয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। কুরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় ইলম ও ওলামায়ে কেরামের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন—
١. قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ.
১. ‘(হে নবি!) আপনি বলুন, যে ব্যক্তি জানে আর যে জানে না, উভয়েই কি সমান? বস্তুত বোধসম্পন্ন লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে।’
১. يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِير.
২. ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নীত করবেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’
২. إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ.
৩. ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।’
কুরআনের পাশাপাশি এ বিষয়ে অনেক হাদিসও রয়েছে। তন্মধ্য থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো—
١. عن معاوية قال قال رسول الله ﷺ: مَنْ يُرِدْ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللَّهُ يُعْطِي.
১. ‘হজরত মুআবিয়া রাজি. সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দীনের প্রজ্ঞা দান করেন। আমি তো নিছক বণ্টনকারী। মূলত দান করেন আল্লাহই।’
১. عن ابن مسعود رضي الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول : لا حسد إلا في اثنتين رجل آتاه الله مالا فسلطه على هلكته في الحق ورجل آتاه الله حكمة فهو يقضي بها ويعلمها.
২. ‘হজরত ইবনে মাসউদ রাজি. সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারো ব্যাপারে ঈর্ষা করা বৈধ নয়। প্রথম ব্যক্তি—যাকে আল্লাহ ধন-দৌলত দান করেছেন এবং পাশাপাশি তা সৎকাজে ব্যয় করার তাওফিকও দিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি—যাকে আল্লাহ দীনের প্রজ্ঞা দান করেছেন আর সে তা কাজে লাগিয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করে এবং লোকদেরকে শিক্ষা দেয়।’
২. عن أبى هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : إذا مات الانسان انقطع عنه عمله الا من ثلاثة الا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له.
৩. ‘হজরত আবু হুরায়রা রাজি. সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—মানুষ যখন মরে যায়, তখন কেবল তিনটি আমল ছাড়া তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। সে তিনটি আমল হলো—১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন ইলম যার দ্বারা লোকজন উপকৃত হয় ৩. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’
৩. عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول :إن الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد ولكن يقبض العلم بقبض العلماء حتى إذا لم يبق عالما اتخذ الناس رؤوسا جهالا فسئلوا فأفتوا بغير علم فضلوا وأضلوا.
৪.‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাজি. সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে টেনে বের করে ইলম উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। অবশেষে যখন তিনি (এ ধরার বুকে) কোনো আলেমকেই অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন লোকজন অজ্ঞ-মূর্খদেরকে নেতারূপে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের নিকট (মাসয়ালা-মাসায়েল) জিজ্ঞাসা করা হবে। আর তারা না জেনেই ফতোয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।’
৪. عن كثير بن قيس قال : كنت جالسا مع أبى الدرداء في مسجد دمشق فجاءه رجل فقال يا أبا الدرداء إنى جئتك من مدينة الرسول الله صلى الله عليه وسلم لحديث بلغني أنك تحدثه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ما جئت لحاجة قال فإنى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : من سلك طريقا يطلب فيه علما سلك الله به طريقا من طرق الجنة وإن الملائكة لتضع أجنحتها رضا لطالب العلم وإن العالم ليستغفر له من في السموات ومن في الارض والحيتان في جوف الماء وإن فضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على سائر الكواكب وإن العلماء ورثة الانبياء وإن الانبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما ورثوا العلم فمن أخذه أخذ بحظ وافر.
৫. ‘তাবিয়ি হজরত কাসির ইবনে কায়েস রহ. বলেন—একবার আমি দামেস্কের এক মসজিদে হজরত আবু দারদা রাজি. এর সাথে বসা ছিলাম। এসময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল—হে আবু দারদা! আমি আপনার নিকট সুদূর মদিনা থেকে কেবল একটি হাদিসের জন্য এসেছি। এছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজন নেই। শুনেছি আপনি নাকি তা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে থাকেন? তখন আবু দারদা রাজি. বললেন—হ্যাঁ, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি—যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা এর উসিলায় তার বেহেশতের পথ সুগম করে দেন। আর ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা পেতে দেন। অধিকন্তু যারা আলেম, তাদের জন্য আসমান ও জমিনে যারা আছেন—সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া করতে থাকেন। এমনকি মাছসমূহ পানির গভীরে থেকেও (ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে)। আলেমগণের মর্যাদা (বে-ইলম) আবেদের ওপর এমন, যেমন পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা সমস্ত তারকারাজির ওপর। আর আলেমগণ হলেন নবির ওয়ারিস। নবিগণ কোনো দিনার বা দিরহাম উত্তরাধিকার রূপে রেখে যান না; বরং তাঁরা উত্তরাধিকাররূপে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।’
ব্যাখ্যা : মদিনা শরিফ থেকে দামেস্ক ১৩০৩ কিলোমিটার (প্রায় হাজার মাইল) দূরত্ব। অথচ তখনকার যুগে আজকালের ন্যায় কোনো বাষ্পীয় যানবাহনও ছিল না। এতেই বোঝা যায়—তখন লোকেরা ইলমে দীন অর্জনে কতটা আগ্রহী ছিলেন। আজ আমাদের কী দশা—একটু গভীরভাবে ভাবা উচিত!
٦. عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : فقيه واحد أشد على الشيطان من ألف عابد.
৬. ‘হজরত ইবনে আব্বাস রাজি. সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—একজন ফকিহ (আলেম) শয়তানের মোকাবেলায় এক হাজার আবেদ অপেক্ষাও শক্তিশালী।’

সুরা যুমার, আয়াত : ৯
সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১
সুরা ফাতির, আয়াত : ২৮
বুখারি, হাদিস : ৭১; মুসলিম, হাদিস : ১০৩৭
বুখারি, হাদিস : ৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৮১৬
মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১; আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৮০
বুখারি, হাদিস : ১০০; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৩
আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১; তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮২; ইবনে মাজা, হাদিস : ২২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৭১৫
তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮১; ইবনে মাজা, হাদিস : ২২২